আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্যেরদ্বারা আদালত অবমাননার অভিযোগে বিএনপি নেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফজলুর রহমানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল দ্বারা নেওয়া হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ফজলুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এবং ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। প্রতিপক্ষের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। শুনানির শুরুতে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং পরে আইনজীবীর মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে বসেন। একপর্যায়ে টেলিভিশন টকশোতে দেওয়া নিজের মন্তব্যের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে অনুপমা ও নিঃশর্ত ক্ষমা চান বিএনপি নেতা। একইসঙ্গে তিনি আদালত অবমাননার জন্য ক্ষমা চাইলে, ট্রাইব্যুনাল তাকে কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেন। এদিন সকাল ১১টার দিকে বিএনপির এই নেতা আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। তার সঙ্গে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ আরো কয়েকজন আইনজীবী। এর আগে, ৩০ নভেম্বর১৯ অভিযোগের ব্যাখ্যা শুনতে ফজলুর রহমানকে তলব করে ট্রাইব্যুনাল। তিনি সশরীরে হাজির হয়ে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে যান। গত ৩ ডিসেম্বর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়া, আদালতের নিরপেক্ষতা হস্তক্ষেপ এবং প্রশিকিউশনের অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ তোলে। এসব কারণে ২৬ নভেম্বর প্রথম শুনানি হয়, পরে ৩০ নভেম্বর অবশিষ্ট বিচার কার্যক্রমের সময় তার ব্যাখ্যা শুনতে তলব করা হয়। উল্লেখ্য, ২৩ নভেম্বর বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের ‘মুক্তবাক: রাজনীতির তর্ক-বিতর্ক’ টকশোতে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন। এতে তিনি শেখ হাসিনার রায় প্রসঙ্গে নানা মন্তব্য করেন। ওই টকশোটি ৪৯ মিনিটের, যা পেনড্রাইভের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়। শুনানিতে জানা যায়, তিনি বলেন, আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি এই আদালত মানি না। উপস্থাপকরা জিজ্ঞেস করেন, তাহলে কি কোনোভাবেই শুনতে চাইনি? তিনি উত্তর দেন, সবাই জানে, আমি এই আদালত মানি না। আমি বলেছি, আমি এই বিচার ব্যবস্থা মেনে নেই না। তিনি আরও বলেন, আমি বলেছি, এই বিচার শেরপ্রতিবন্ধিত নয়, এই কোর্টের গঠনপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়। তিনি অভিযোগ করেন, প্রসিকিউশনের সবাই শিবিরপন্থী। ট্রাইব্যুনাল জানায়, ফজলুর রহমান এসব মন্তব্য করতে গিয়ে বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার ক্ষতি করেছেন। ট্রাইব্যুনাল তাকে জানায়, তার আসল পরিচয় হলো— তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও আগামী নির্বাচনেও এমপি প্রার্থী। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৩০ নভেম্বর তিনি লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। তবে, বিএনপির এই নেতা জুলাই বিপ্লব নিয়ে মন্তব্য করলে তার সাময়িক বরখাস্তের ঘটনাও ঘটে। প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানান, ফজলুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচার মানেন না কারণ এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিচারকার্য জন্য গঠিত নয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ সালে প্রণীত, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে সক্ষম। এরপর ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এসব গুরুতর মন্তব্যের জন্য আজকের শুনানির দিন ধার্য করা হয়। ফজলুর রহমানকে আগামী ৮ ডিসেম্বর সশরীরে হাজির হয়ে তাঁর বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply